চাঁপাইনবাবগঞ্জ | মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ info@mohanonda24.com +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩
বিজ্ঞানের প্রধান শাখার নাম রসায়ন। এর ইংরেজী প্রতিশব্দ কেমিষ্ট্রী। এ শব্দটি আরবী ‘আল-কিমিয়া’ শব্দ থেকে এসেছে। আর আরবী ‘আল-কিমিয়া’ শব্দটি মিশরীয় ‘কামিত’ শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ গলিত ধাতু। সপ্তম শতাব্দী থেকে ‘আল-কিমিয়া’ শব্দটি ব্যবহার হয়ে আসছে। রসায়নকে আরব

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের কোন অবদান নেই! (পর্ব-১)

আ/ স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০২৩ ১০:০০

আ/ স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০২৩ ১০:০০

মুসলিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান (রসায়নের জনক)

বিজ্ঞানের প্রধান শাখার নাম রসায়ন। এর ইংরেজী প্রতিশব্দ কেমিষ্ট্রী। এ শব্দটি আরবী ‘আল-কিমিয়া’ শব্দ থেকে এসেছে। আর আরবী ‘আল-কিমিয়া’ শব্দটি মিশরীয় ‘কামিত’ শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ গলিত ধাতু। সপ্তম শতাব্দী থেকে ‘আল-কিমিয়া’ শব্দটি ব্যবহার হয়ে আসছে। রসায়নকে আরবীতে ‘আল-কিমিয়া’ ছাড়াও ‘আল-হিকমা আস্ সানাআহ্’ নামেও ডাকা হতো।
পদার্থের গঠন, পদার্থের পারস্পারিক ক্রিয়ায় নতুন পদার্থের সৃষ্টি এবং পদার্থের ক্রিয়া-বিক্রিয়া সম্বন্ধে যে শাখায় আলোচিত হয়, রসায়নবিদগণ সে শাখাকে কেমিষ্ট্রী নামে অবিহিত  করেছেন। বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় রসায়নের  অবদান রয়েছে।

রসায়নের শিকড়ে পৌঁছাতে হলে দহনের ইতিহাস খুঁজতে হবে। আগুন আবিষ্কারের পর রসায়নের সূচনা হয়। আগুন এমন এক শক্তি, যা এক বস্তুকে অন্য বস্তুতে রুপান্তরের করতে পারে। মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে আগুনকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের অন্ত ছিল না। আগুন থেকে তারা লোহা আবিষ্কার করে। শুরু হয় লৌহ যুগ। তারপর কাঁচ আবিষ্কার হয়, তারপর সোনা। সোনা সবচেয়ে মূল্যবান ধাতুর মর্যাদা লাভ করলে অনেকেই ধাতুকে সোনায় পরিনত করার চেষ্টা চালায়। ফলে বিজ্ঞানের একটি শাখার উদ্ভব ঘটে, যাকে রসায়ন বলা হয়। সে সময় রসায়নের লক্ষ্য ছিল যে কোন সাধারন ধাতুকে স্বর্ণে বা রৌপ্যে রুপান্তরিত করা। তাদের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি ঔষধ আবিষ্কার করা যা সকল রোগের নিরাময় হতে পারে।


খৃষ্টপূর্ব ৩৫০০ বছর পূর্বে মেসোপটেমিয়ায় দজলা ও ফোরাত নদীর মধ্যবর্তী স্থানে এক উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠে। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তারা রসায়নিক বস্তুগুলো নিয়ে প্রথম চিন্তা-ভাবনা ও প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু করে। সে সময় ধাতুর ব্যবহারে মেসোপটেপিমীয়রা বেশ উন্নতি সাধন করেছিল। খৃষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দ সর্ব প্রথম তারা ব্রোঞ্জের ব্যবহার শুরু করে।


প্রাচীন মিশরে নিয়মতান্ত্রিক রসায়ন চর্চা শুরু হয়। নীল নদের মোহনায় মেমফিসের বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিদ্যা পড়ানো হতো। তখনো মিশরের লোকেরা পিড়ামিড নির্মানের কলা-কৌশল রপ্ত করতে পারেনি। এরপর তারা পদার্থবিদ্যা শিখে মমি তৈরী করার ক্ষেত্রে কাঠের টুকরো জোড়া দেবার জন্য গাদ ও সিমেন্ট বানানোর চেষ্টা করল। বিভিন্ন বৃক্ষের আটা, গম, যব ইত্যাদি দিয়ে তারা কাগজ তৈরী করল। এসব কাজে তারা আগুনকে ব্যবহার করত। এভাবে মিশরে রসায়ন চর্চার যাত্রা শুরু হয়।

প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে মিশরীয়রা স্বচ্ছ কাঁচ তৈরী করে। এরপর চিন্তার জগত আরো প্রসারিত হলে তারা রঙ্গিন কাঁচ তৈরী করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে রোমানরা কাঁচ দিয়ে নকল মণি-মুক্তো তৈরীর চেষ্টা চালায়। তারা নকল সোনা এবং অন্য জিনিসকে কিভাবে সোনা বানিয়ে মানুষের চোখে ধূলো দেয়া যায়, তা নিয়ে গভীর গবেষণা চালায়। এক পর্যায়ে আরবে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে এবং আরবরাও রসায়ন এবং রসায়নের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা নিয়ে চিন্তা ভাবনায় জড়িয়ে পড়ে।

ইসলামের আগমনের পূর্বে রসায়ন বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত ছিল না, উপায় উপকরণের মাধ্যম হিসেবে রসায়ন চর্চা করা হতো। রসায়নকে সর্বপ্রথম বিজ্ঞান হিসেবে মুসলমানরাই প্রতিষ্ঠিত করেন। হাম বোল্ট বলেন, “আধুনিক রসায়নশাস্ত্র মুসলমানদের আবিষ্কার, এ বিষয়ে তাদের কৃতিত্ব অতুলনীয় ও চিত্তাকর্ষক।” ঐতিহাসিক রেজাউল করিম বলেন, “জ্যোতির্বিদ্যা, অঙ্কশাস্ত্র এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের পর আরবদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রসায়নে। গ্রীকদের মত অস্পষ্ট অনুমান ও কল্পনার উপর নির্ভর না করে আরবরাই সর্ব প্রথম নিরীক্ষণ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। পর্যবেক্ষণ এবং সত্য উদঘাটনের প্রবল স্পৃহা আরবদেরকে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে পৌছাতে সাহায্য করেছে।”

-প্রতিবেদন চলমান



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: