চাঁপাইনবাবগঞ্জ | সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ info@mohanonda24.com +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩
উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে টালমাটাল সমায় পার করছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; উত্তরবঙ্গের আলোর দিশারী

হ.আ/রিপোর্টার | প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৩ ০৪:৫৮

হ.আ/রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৩ ০৪:৫৮

সংগৃহিত ছবি

উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে টালমাটাল সমায় পার করছে। তবে ইতিহাস আরো ঐতহ্যে মোড়ানো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মলগ্নের আগে থেকেই তাঁর স্বকীয়তা ধরে রেখেছে। ‘প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ’ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে বহু সংগ্রাম আর সংকটের ইতিহাস।

চলুন জেনে নিই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সোনালী ইতিহাস -----

ব্রিটিশ যুগে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে “রাজশাহী কলেজ” প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় রাজশাহী কলেজে আইন বিভাগসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই এসব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তাই সে সময়ে রাজশাহীতে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তান, তথা বর্তমান বাংলাদেশের সব কলেজগুলোকে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাজশাহীতে এ সময় আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগে থেকেই মূলত রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার  আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর, রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
এর পর ১৯৫২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য রাজশাহীর ভুবন মোহন পার্কে সর্বপ্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। তার পর ১৯৫৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, ভুবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভায় জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন তখনকার আলোচিত রাজনীতিবিদ মাদার বখশ। মাদার বখশ ততকালীন পাকিস্তান সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন,“যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না হয়, তবে উত্তর বঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব।”

মাদর বখশের সেই বক্তব্যে দেশের সুধি মহলের পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারেরও টনক নড়ে। অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও, ১৯৫৪ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রফেসর ডক্টর ইতরাত হোসেন জুবেরী ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপচার্য।

শুরুতে ১৬১ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুর সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস  বর্তমান সমায়ের মতো ছিলো না। বিভিন্ন জায়গায় স্থানন্তরিত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আজকের এই দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস পেয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের কয়েক দশকে, দেশ টালমাটাল পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যায়। তাই বিভিন্ন সময়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬২ - এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ - এর ছয় দফা, ১৯৬৯ - এর গণআন্দোলন, ১৯৭০ - এর সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ - এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, এবং ১৯৯০ - এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এ রাবির শিক্ষক ও ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছিলেন।
এসব ঘটনায় আলাদা করে বলতে হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার কথা। ড. শামসুজ্জোহা ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাত থেকে তার ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হন। ড. জোহার মৃত্যুতে সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। প্রতিবাদে টলে উঠেছিল আইয়ুব খানের গদি, পতন হয়েছিল সেই স্বৈরশাসকের। ফলে স্বাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির পথের একধাপ পেরিয়ে এসেছিল মুক্তি কামি বাঙালি। বাঙালীর মনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোহা বেঁচে আছেন ‘শহীদ জোহা’ হিসেবে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক হবিবুর রহমান, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার,  মীর আবদুল কাইয়ুমসহ অনেক ছাত্র ও কর্মকর্তা - কর্মচারী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু খ্যাতিমান পণ্ডিত, গবেষক ও জ্ঞানতাপসের ছোঁয়া রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমানে যারা দেশ পরিচালনা করছেন,  তাদের অনেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এসবের পাশাপাশি শিক্ষাদিক্ষা ও গবেষণায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেন উত্তরবঙ্গের বুকে একটি হীরক খণি, যার দ্যুতিতে উজ্জ্বল গোটা দেশ।  কিন্তু মাঝে মাঝে অপ্রতীকর কিছু ঘটনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস ও দুর্বার যাত্রার কালো দাগ কাটে। 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: