চাঁপাইনবাবগঞ্জ | শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ info@mohanonda24.com +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩
যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোনামসজিদ স্থল বন্দর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ রেললাইন তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে ইতোমধ্যেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ এর নতুন রেললাইনের পরিকল্পনা

হ.আ/রিপোর্টার | প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩ ০১:০৭

হ.আ/রিপোর্টার
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩ ০১:০৭

সংগৃহিত ছবি

যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোনামসজিদ স্থল বন্দর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ রেললাইন তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে ইতোমধ্যেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার রেললাইন তৈরি হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬০৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,  অন্য প্রকল্পের তুলনায় এতে ব্যয়বহুল বেশি। ডিপিপি অনুযায়ী আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার  পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

তথ্য সূত্রের জানাযায়, সরকার বড় কোনো প্রকল্প হাতে না নেওয়ার কারণে এই মূহুর্তে সরকারি অর্থায়নে নতুন এই রেললাইন নির্মান করা সম্ভব হবে না। ফলে বৈদেশিক অর্থায়ন খোঁজার দিকে এগোচ্ছে রেলওয়ে। গতকাল সোমবার এই প্রকল্পের ডিপিপির উপর রেলের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সভা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ইতিমধ্যেই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়ে গেছে। এতে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে খরচ অনেক বেশি হবে। কারন এই রেললাইন আম বাগান আছে এমন ভূমির মধ্য দিয়ে যাবে। ফলে বৈদেশিক সহয়তায় এ প্রকল্পের কাজ করার বিশেষ আলোচনা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈদেশিক সহায়তার জন্য প্রকল্পের পিডিপিপি রেলপথ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। তার পর সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হবে। প্রকল্পটি অনেক বড় ফলে সরকারি অর্থায়নে এটি সম্ভব হবে না। আমাদের পরিকল্পনা আছে জমি অধিগ্রহণ কাজটি হবে সরকারি অর্থায়নে। অন্যদিকে নির্মান কাজটি হবে বৈদেশিক অর্থায়নে।

এই প্রকল্পের আওতায় ৩৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার মূল লাইন এবং ১২ দশমিক ২৬ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং লাইন নির্মান করা হবে । ৩ টি মেজর ব্রিজ, ৩৯ টি  আরসিসি বক্স  কালভার্ট এবং ৪.৫৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মান হবে।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ হবে ৫২৭ দশমিক ৯ একর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাইপাস, শিবগঞ্জ,  কানসাট ও সোনামসজিদ স্টেশনে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিংক সিগন্যালিং সিস্টেমসহ নতুন  স্টেশন ভবন নির্মান হবে। রেলওয়ে ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হবে।

প্রকল্পের ডিপিপিতে বলা হয়েছে, সোনামসজিদ স্থলবন্দর বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর। এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। এই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মূলত সড়কপথে হয়ে থাকে। সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মানের পর রেলপথে পশু পরিবহন করলে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে রেলওয়ের চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সোনামসজিদ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনসহ এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের প্রসার হবে।

প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১৬ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরের সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোনামসজিদ পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মানের নির্দশনা দিয়েছিলেন। এর পরই রেলওয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মানের ওপর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছে।
সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মান আর্থিকভাবে অলাভজনক হলেও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে। একই সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাইপাস, নয়া নাওভাঙ্গা, শিবগঞ্জ, কানসাট, মোবারকপুর এবং সোনামসজিদের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো সংযুক্ত হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। এতে যানবাহন চলাচলের কারণে অত্র অঞ্চলের  সড়ক নেটওয়ার্কের আয়ুকাল কমে যাচ্ছে। এছাড়া সড়ক পরিবহনের সময় মালামালের ক্ষতি হচ্ছে। রেলওেয়ের রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ থাকলেও সোনামসজিদ পর্যন্ত কোন রেলপথ নেই। সোনামসজিদ স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারত থেকে পণ্য ও পণ্যের বাস্ক পরিবহন রেলপথে সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন  প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে। সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেলওয়ের নেটওয়ার্ক না থাকায় এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। ভৌগোলিক ভাবে এ অঞ্চলে আমের ফলন ভালো হয়, যা সমগ্র বাংলাদেশসহ দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয়। সোনামসজিদ পর্যন্ত রেলপথ না থাকায় এর মাধ্যমে সরাসরি আম পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না।

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: