
হোয়াসং বায়তুল ফালাহ মসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টার মিলনায়তনে গত (১৪ জুন ২০২৫) শনিবার রাতে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল) এবং কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সম্মানিত কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব সারওয়ার আলম স্যার এবং দূতাবাসের লেবার উইং ও বোয়েসেল গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, কোরিয়া মুসলিম কমিউনিটি'র কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াসির চৌধুরীসহ দক্ষিণ কোরিয়া অবস্থিত বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।।
মত বিনিময় সভায় কোরিয়া মুসলিম কমিউনিটি দক্ষিণ কোরিয়া এর প্রস্তাবনা সমূহঃ
০১. দূতাবাসে কার্যকরী ইপিএস ডেস্ক খোলা: কোম্পানি/ইপিএস চাকরি সংশ্লিষ্ট যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য এম্বাসিতে আলাদা ডেডিকেটেড ডেস্ক খোলা। অথবা পুরো কোরিয়াকে কয়েকটা অঞ্চলে ভাগ করে একাধিক অফিস খোলা, যেখানে ইপিএস কর্মীগণ তাদের যাবতীয় সমস্যার তড়িৎ সমাধান পাবেন।
০২. কোম্পানি পরিবর্তন রোধে দূতাবাস কর্তৃক ইপিএস কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা।
০৩. কোম্পানি পরিবর্তন রোধে বোয়েসেল কর্তৃক HRD কোরিয়ার সাথে সমন্বয় করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে করে নতুন আগত কর্মীগণ মিনিমাম এক বছর কোম্পানিতে কাজ করা নিশ্চিত করে।
০৪. ট্রেনিং সেন্টারের শিক্ষকদের মান উন্নয়নে বাস্তবসম্মত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা।
০৫. বোয়েসেলের প্রশিক্ষণ ভিডিও কোরিয়ান মিডিয়ায় প্রকাশের ব্যবস্থা করা।
০৬. একই কোম্পানিতে পাঁচ বছর বা তার অধিক কাজ করা কর্মীদের বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহ প্রদান করা।
০৭. নতুন আগত কর্মীদের কতো পার্সেন্ট কোম্পানি পরিবর্তন করেছে তা প্রতি ৬ মাসে একবার প্রকাশ করার ব্যবস্থা করা।
০৮. প্রতি বছর ভিসা ইস্যুর সংখ্যা বিবেচনা করে কোটা নির্ধারণ করা।
০৯. স্পেশাল সিবিটির কর্মীদের কারো কারো মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই সত্যতা যাচাইপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১০. নোদোংবু গুলোতে বাংলাদেশী প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে দূতাবাস প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে।
১১. জামানত ইস্যু: শুধু নিম্নোক্ত কারণে জামানত বাতিল করা: ক) কোনো কারণে অবৈধ হলে। খ) কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স বা ফৌজদারি অপরাধ সংগঠিত হলে। এর বাইরে অন্য কোনো কারণে যেমন রিলিজের কারণে জামানত বাতিলের সিদ্ধান্ত পূণর্বিবেচনা করা।
১২. কোরিয়ায় আসার পর ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাস্তব ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১৩. শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলে দিয়ে কর্মক্ষম ও পরিশ্রমী জনশক্তি বাছাই করা।
১৪. ইস্যুর পরপর ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা। দেরিতে ফ্লাইটের কারণে ইস্যু কম হয়।
১৫. কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতি বাতিল করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য মাস ব্যাপী সরাসরি ক্লাসের ব্যবস্থা করা।
যেমন:
ক. ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি,
খ. যেকোনো ধরনের কাজের সাথে মানিয়ে নেয়ার বাস্তব প্রশিক্ষণ,
গ. কোম্পানী পরিবর্তনের কারণে ব্যক্তি ও দেশের এমনকি মালিক পক্ষের ক্ষতির দিকগুলোর ব্যাপারে সচেতন করা,
ঘ. মালিক বা অন্য সহকর্মীদের সাথে আচরণ,
ঙ. কোরিয়ায় জীবন-যাপন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষা প্রদান করা।
১৬. একাধিক বাংলাদেশী কাজ করে এমন কোম্পানির তালিকা সংরক্ষণ এবং ভিজিট করা। মালিক ও মালিকের দৃষ্টিতে যারা ভালো কাজ করে, তাদেরকে তৎক্ষণাৎ মালিকের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা।
১৭. বোয়েসেল-দূতাবাস যৌথ উদ্যোগে দুই দেশের মধ্যে কিভাবে বানিজ্যিক এবং জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি করা যায় তার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৮. যে সকল খাতে লোক সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে, কোটা বৃদ্ধিতে তার যথাযথ উদ্যোগ নেয়া।
১৯. বোয়েসেলের মাধ্যমে ছাত্র পাঠানোর বিষয়টি পূণর্বিবেচনা করা। কেননা, এতে সমালোচনা এবং প্রবাসীদের মনে আস্থার সংকট তৈরি করছে।
২০. কোরিয়ার বিভিন্ন কমিউনিটি প্রতিনিধিদের সাথে ধারাবাহিক পর্যালোচনা মিটিং রাখা।
২১. বোয়েসেল আমাদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান। সকল ক্ষেত্রে কোরিয়া প্রবাসীদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২২. মালিক পক্ষের অসন্তুষ্টির কারণ সমূহ:
ক. কোম্পানিতে বাংলাদেশীদের মধ্যকার পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে মালিকদের অসন্তুষ্টি।
খ. সরাসরি ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে নির্ধারিত সময়ে ছুটি কাটিয়ে আসতে না পারায় মালিকদের অসন্তুষ্টি।
গ. অধিক বেতন প্রাপ্তির আশায় কর্মস্থল পরিবর্তন করা। এ সকল কারণ দূরীকরণে কর্মীদের প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা।
২৩. দূতাবাসের প্রতি বিশেষ পরামর্শ:
ক. শনি-রবিবার সেবা ডেস্ক চালু করা।
খ. বৈধ-অবৈধ সকল শ্রেণীর কর্মীদের সমস্যা সমাধানে তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়া।
গ. দূতাবাসের উদ্যোগে একাধিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে বিভিন্ন কোম্পানি ভিজিট করে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা।
ঘ. দূতাবাসে সার্বক্ষণিক দোভাষী হেল্প লাইন রাখা।
ঙ. বিভিন্ন দিবসে আলোচনা অনুষ্ঠানে কমিউনিটি প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা।
চ. কর্মস্থলে বা অন্য কোথাও দুর্ঘটনায় আহত-নিহত কর্মীদের তৎক্ষণাৎ খোঁজ নেয়া।
ছ. বৈধ-অবৈধ মৃত ব্যক্তির লাশ সরকারী অর্থায়নে দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের কল্যাণ, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় আমরা সবাই একসাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের প্রস্তাবনা গুলো প্রবাসীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে শুধু প্রবাসীদের জীবনমানই উন্নত হবে না, বরং বাংলাদেশ ও কোরিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, শ্রমবাজার এবং সম্মানও দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে।
আমরা বিশ্বাস করি—বাংলাদেশ সরকার, বোয়েসেল ও কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আমাদের এই দাবিগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। প্রবাসীরা যেন আস্থার সাথে তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে—এটাই আমাদের শেষ চাওয়া।
"প্রবাসীর মর্যাদা রক্ষা হোক রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারে—এগিয়ে যাক বাংলাদেশ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: