চাঁপাইনবাবগঞ্জ | সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ info@mohanonda24.com +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩
যাকাত ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। পবিত্র কোরআনে যেখানে নামাজের কথা এসেছে, সেখানেই দেখা যায় যাকাতের কথা।

কি পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকলে যাকাত প্রদান করতে হবে!

হ.আ/রিপোর্টার | প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৩৬

হ.আ/রিপোর্টার
প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৩৬

যাকাত ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ

যাকাত ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। পবিত্র কোরআনে যেখানে নামাজের কথা এসেছে, সেখানেই দেখা যায় যাকাতের কথা। সুরা বাকারার এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, সালাত প্রতিষ্ঠা করেছে এবং যাকাত দিয়েছে, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের নিকট। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৭৭)

সব ধরনের সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ হয় না। শুধুমাত্র সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরজ হয়। আবার যাকাত সবার ওপরও ফরজ নয়। সুস্থ মস্তিষ্ক, স্বাধীন, বালেগ মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে যাকাত আদায় করা ফরজ। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৫৯ বাদায়েউস সানায়ে: ২/৭৯,৮২) 
কাফের যেহেতু ইবাদতের যোগ্যতা রাখে না তাই তাদের ওপর যাকাত আসে না। এছাড়া অসুস্থ মস্তিষ্ক ও নাবালেগের ওপরও জাকাত ফরজ নয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৬/৪৬১-৪৬২; রদ্দুল মুহতার: ২/২৫৯, ২/২৫৮)

স্বর্ণ বা রুপার সরাসরি ৪০ ভাগের একভাগ অথবা মূল্যের ৪০ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে। স্বর্ণের নিসাব হলো ৭.৫ তোলা বা ৯৫.৭৪৮ গ্রাম (প্রায়)। রুপার নিসাব ৫২.৫ তোলা বা ৬৭০.২৪ গ্রাম (প্রায়)। (আহসানুল ফতোয়া: ৪/৩৯৪, আল ফিকহুল ইসলামি: ২/৬৬৯)

প্রশ্ন হলো— কারো কাছে কিছু স্বর্ণ, কিছু রুপা বা কিছু টাকা একবছর জমা থাকলে তাকে কোন হিসাবে জাকাত আদায় করতে হবে? বা কিসের নিসাব ধরে তাকে জাকাত দিতে হবে, যেহেতু স্বর্ণ ও রুপার মূল্য এক নয়?

ইসলামি ফিকহের মূলনীতি হলো— যাকাত ও ওয়াকফের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি গরিবের জন্য অধিক উপকারী সেটিকেই গ্রহণ করা হয়। সুতরাং কারো কাছে যদি সোনা, রুপা ও নগদ অর্থ থাকে, কিন্তু কোনটিই আলাদাভাবে নিসাব পরিমাণ না হয়, তাহলে সোনা-রুপা-টাকা সব মিলিয়ে যেই নেসাব পূর্ণ হবে, সেই নেসাবের ওপরই যাকাত আবশ্যক হয়ে যাবে। যদি সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণের নিসাব পূর্ণ হয়, তাহলে স্বর্ণের মূল্য হিসেবে জাকাত আবশ্যক হবে। যদি স্বর্ণের নিসাব পূর্ণ না হয়, কিন্তু সাড়ে ৫২ তোলা রুপার নিসাব পূর্ণ হয়, তাহলে রুপার মূল্য হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। সহজ কথায়, স্বর্ণ ও রুপার মধ্যে যেটির মূল্য দিয়ে জাকাত আবশ্যক হয়, সেটির মাধ্যমেই যাকাত আবশ্যক ধরা হবে।

যদি কারো কাছে শুধু রুপা থাকে এবং যদি রুপার নেসাব পূর্ণ না হয়, তাহলে তার ওপর যাকাত আবশ্যক হবে না। একইভাবে কারো কাছে শুধু স্বর্ণ থাকলে স্বর্ণের নিসাব পূর্ণ হলেই যাকাত ফরজ হবে। (হেদায়া: ১/১৭৯; তাতারখানিয়া: ২/২৩৭; মাসবুত: ২/১৯১; বাদায়েয়ুস সানায়ে: ২/১৮)

ব্যবসায়িক পণ্য, খনিজ সম্পদ, গবাদিপশু ও কৃষি ফসলের হিসাবে --

ব্যবসায়ী পণ্যের নিসাব: ব্যবসায়ী পণ্যের নিসাব হলো কোনো জিনিস বিক্রি করার উদ্দেশ্যে রাখা হলে তাকে ব্যবসার পণ্য মনে করা হবে। সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সমান মূল্যমানসম্পন্ন ব্যবসার পণ্যের জাকাত দিতে হবে। বছরান্তে তখনকার বাজারদর হিসেবে মূল্য ধরতে হবে। খরিদমূল্য ধরলে চলবে না।

খনিজ সম্পদের নিসাব: খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রে কোনো নিসাব নেই। খনিজ সম্পদ ব্যক্তিমালিকানায় থাকলে সম্পদ উত্তোলনের পরই হিসাব করে জাকাত দিতে হবে। খনিজ সম্পদের জাকাতের হার হচ্ছে ২০ শতাংশ।

গবাদিপশুর নিসাব: নিজের কাজে খাটে এবং বিচরণশীল বা ‘সায়েমা’ নয় এমন গরু-মহিষ বাদ দিয়ে ৩০টি হলেই তার ওপর জাকাত দিতে হবে। জাকাতের হার হবে প্রতি ৩০টির জন্য একটি এক বছর বয়সের গরু এবং প্রতি ৪০টি বা তার অংশের জন্য দুই বছর বয়সের একটি গরু। আর ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৪০টি হলে একটি, ১২০টি পর্যন্ত দুটি, ৩০০টি পর্যন্ত তিনটি এবং এর ওপরে প্রতি ১০০টি ও তার অংশের জন্য আরও একটি করে ছাগল জাকাত দিতে হবে।

কৃষি ফসলের নিসাব: কৃষি ফসলের ক্ষেত্রে প্রতিটি শ্রেণির ফসলের নিসাব পৃথকভাবে হিসাব করে নিসাব পরিমাণ ফসল হলে উশর দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ ধান যদি ৩০ মণ বা তার বেশি হয়, পাট যদি ৩০ মণ বা তার বেশি হয়, তাহলে ফসল তোলার সময়ই তার উশর দিতে হবে। তেমনিভাবে কলাই, সরিষা, মধু ইত্যাদি প্রতিটির নিসাব পৃথকভাবে ধরতে হবে। 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: