মুসলমানদের রসায়ন চর্চার মূল গ্রন্থ হল আল-কুরআন। কারন পবিত্র কুরআন শরীফ সর্বাধুনিক বিজ্ঞানময় ধর্মীয় মহাগ্রন্থ। ফ্রান্সের বিখ্যাত চিকিৎসক ড. মুরিস বুকাইলি তার এক গ্রন্থে লিখেছেন, “আল-কুরআনে প্রচুর বৈজ্ঞানীক তথ্য ও উক্তি রয়েছে। এসব বাণী অবতীর্ণ ও সংকলিত হয়েছে তের শ বছর আগে। আল-কুরআনের বিভিন্নমুখী বৈজ্ঞানীক তথ্যাবলি আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কিভাবে এত সমঞ্জস্যশীল হল তা বিস্ময়ের ব্যাপার।”
রসায়ন বিষয়ে কুরআনে প্রচুর আয়াত রয়েছে। আল-কুরআনের রসায়ন ভিত্তিক আয়তগুলো নিয়ে বিস্তার আলোচনা করেছে। তিনি এগুলোকে চার ভাগে ভাগ করেছেন। এক, সাধারন রাসায়নিক দ্রব্য সম্পর্কীত আয়াত। দুই, দুধ ও মধু উৎপাদন সম্পর্কীত আয়াত। তিন, বৃষ্টি দ্বারা উদ্ভিদ ও সব্জি উৎপাদন সম্পর্কীত আয়াত। চার, বাতাস থেকে উৎপন্ন খাদ্য বিষয়ক আয়াত।
ইসলামের গোড়ার দিকেই রসায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ঔষধ নিয়ে নানাবিধ বক্তব্য রেখেছেন। হাদীসের কিতাবগুলোতে ‘তিববুন নবী’ শীর্ষক অধ্যায়ে চিকিৎসা ও ঔষধ বিষয়ক তাঁর বাণীগুলো সংকলিত রয়েছে। ঔষধকে যদি রাসায়নের পর্যায়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয়, তবে ইসলামের ইতিহাসে রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম রাসায়নিক। এরপর ‘দারুল হিকমা’ তথা ‘জ্ঞানের দরজা’ উপাধি প্রাপ্ত চতুর্থ খলীফা হযরত আলী বিন আবী তালিব রসায়ন বিষয়ক প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেন, “পারদ ও অভ্র একত্র করে যদি বিদ্যুতের মত কোন বস্তুর সাথে মিশিয়ে দিতে পারো, তাহলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অধিশ্বর হতে পারবে।”
নিকৃষ্ট ধাতু থেকে সোনা তৈরীর এই ফরমুলার পরিকল্পকারী হিসেবে হযরত আলীকে রসায়ন বিজ্ঞানের জনক বলা যেতে পারে। হযরত আলীর রাসায়নিক পরিকল্পনা ও ফর্মূলাকে চিন্তাগতভাবে লালন করেছেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত আমীর মুয়াবিআ বিন আবী সুফিয়ানের পৌত্র খালিদ বিন ইয়াযিদ। রসায়নের ইতিহাসে তিনি ঐতিহাসিক চরিত্র। উমাইয়া বংশের এ যুবরাজ গ্রীক ভাষায় রচিত বিজ্ঞানের অনেক বই সর্ব প্রথম আরবীতে অনুবাদ করেন। তিনি মিশরে গিয়ে রসায়ন চর্চা করেন। আল-রাজী, আবুল কাসেম প্রমূখ খ্যাতিমান রসায়নবিদগন তাদের মূল্যবান রচনায় রসায়ন সম্পর্কে খালিদের মতামত নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি ৭০৪ খৃষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
হারবী আর হুমায়রী এবং জাফর আস-সাদিক উভয়ে আধুনিক রসায়নের জনক জাবের বিন হাইয়ানের শিক্ষক। তারা মিশরের রসায়ন সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান রাখতেন। ইবনে হাইয়ান তাদের রসায়নিক থিওরীগুলো নিয়ে তার গ্রন্থে বিস্তার আলোচনা করেছেন। হারবী আল-হুমায়রী সপ্তম শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইয়ামনে জন্ম গ্রহন করেন। আর জাফর আস-সাদিক খুব সম্ভবত ৭০২ খৃষ্টাব্দে মদীনায় জন্ম গ্রহন করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: