চাঁপাইনবাবগঞ্জ | সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ info@mohanonda24.com +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩
ইলমে দ্বীনি শিক্ষা করা আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি ও অনুগ্রহ ছাড়া অসম্ভব। ইলমে দীন ইহকাল-পরকালে সফলতার মূল মন্ত্র।

সন্তানের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনে বাবা-মা’র দায়িত্ব।

আ/স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৩ ১৪:২৯

আ/স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৩ ১৪:২৯

ফাইল ছবি

ইলম এমন মহামূল্যবান সম্পদ, যার মাধ্যমে মানুষ সত্য-মিথ্যা, হালাল-হারাম, ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর বিধি-বিধান সম্পর্কে অবগত হতে পারে। শরিয়তের জ্ঞান মানুষকে সব ধরনের অপবিত্রতা থেকে রক্ষা করে। সৎ চরিত্রের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। তার চিন্তা-চেতনায় ইলমে দীন আমূল পরিবর্তন আনে। এজন্যই শরিয়ত ইলমে দীন অর্জন করা ফরজ করেছে। ইসলামও ইলমে দীন অর্জন করার প্রতি উৎসাহিত করেছে। নর-নারী সবার জন্য ইলমে দ্বীন করা ফরজ।

তালিবে ইলমদের বাবা-মা ও অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে মাসে মাসে টাকা পয়সা দিলেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং তাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়। তাদের সন্তানদের যে কারণে, যে উদ্দেশ্যে মাদরাসায় দিয়েছে সে লক্ষ্য অর্জনে সবসময় চিন্তা থাকতে হবে। চিন্তা করতে হবে আমার সন্তান বাস্তবিক পক্ষেই কী ইলমে দ্বীন অর্জনে সময় ব্যয় করছে না সময় অযথা নষ্ট করছে। তার পড়াশোনা কেমন চলছে? তার স্বভাব-চরিত্র ভাল আছে তো? তার বন্ধু বা যাদের সঙ্গে চলছে তাদের চরিত্র ভাল তো? তার প্রতি শিক্ষক ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আছে কী না। এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে তালিবে ইলমের বাবা-মা কিংবা অভিভাবকের অবশ্যই অবগত থাকতে হবে। এজন্য তালিবে ইলমের বাবা-মা ও অভিভাবকদের কাছে আমার বিনিত অনুরোধ প্রত্যেক সপ্তাহে কমপক্ষে একবার হলেও আপনার সন্তানকে দেখতে মাদরাসায় আসুুন। 

সন্তানের পড়াশোনা স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে খোঁজ নিবেন। শিক্ষকের কাছে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। খারাপ ছাত্রদের সঙ্গে মিশে কী না খোঁজ-খবর নেবেন। তার সাথী-বন্ধুদের কাছে তার বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন। বাচ্চাদের কোমল হৃদয়, মাদরাসার চার দেয়ালে তাদের দায়বদ্ধতা, তাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে তারা অবগত থাকে না। শৈশবের দুরন্তপনা থাকায় পড়াশোনার বিষয়টা গৌন হয়ে যায় অনেক সময়। তাই আপনার সঠিক অনুসন্ধান ও তার প্রতি যত্ন না থাকলে মানুষ নাও হতে পারে আপনার সন্তান। ইলমে দ্বীনের মত মহান সম্পদ থেকে বিরত হতে পারে সে। যখন আপনার সন্তানের প্রতি তার শিক্ষক ইলমে দ্বীনের বিষয়ে চেষ্টা করবে আর আপনি তার আদব-আখলাক ভদ্রতা শিষ্টাচার বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন তখনই আপনার সন্তান দিন দিন আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পা পা করে এগিয়ে যাবে। ইলমে দীনের সুমহান আলোয় আলোকিত হবে।

 

আরেকটি বিষয় তালিবে ইলমের অভিভাবক বা বাবা-মাকে বলব, বাচ্চাদের সব শখ পূরণ করার প্রয়োজন নেই। অনেক সময় আমরা সন্তানের শখ পূরণ করতে গিয়ে তার সব চাহিদা মতো তাকে দিয়ে দিই। এটি ভবিষ্যতে আপনার সন্তানের জন্য অনেক বড় বিপদের কারণ হতে পারে। সন্তানের সবচেয়ে বড় আবদারের বিষয় বর্তমানে মোবাইল। অনেক অভিভাবক তার সন্তানকে মাল্টিমিডিয়া মোবাইল দেয়াটাকে এখন ফ্যাশন মনে করেন। মোবাইল এমন তলোয়ার যার মাঝে ভাল খারাপ দুইটাই আছে। আমি বলতে চাই, আজকার জামানায় মোবাইল এমন একটি বস্তু যার মধ্যে ভাল বিষয় থেকে খারাপের সংখ্যাটাই বেশি। আজ আপনি আপনার সন্তানের শখ বা আবদার রাখতে মোবাইল কিনে দিলেন, কিন্তু আপনি কী একবার চিন্তা করেছেন এ মোবাইল আপনার সন্তানের জীবন তছনছ করে দিবে। মোবাইল এমন এক ভয়ংকর বস্তু, যাতে তার মান আমল ইলম ও ভদ্রতা সব কিছু কেড়ে নিতে পারে। খুব সস্তায় মেমোরি কার্ড আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সে এমন এমন অপরাধে জড়িয়ে যাবে যা আপনি কোনো দিন কল্পনাও করেন নি।

আজ আস্ত সিনেমা হল মোবাইলে মেমোরির মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। আপনার সন্তান আপনার পাশের কক্ষেই মোবাইলের মাধ্যমে কবিরা গুনাহ করে যাচ্ছে, অথচ আপনি এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেন না। আপনি কী জানেন, আপনার সন্তান ইউটিউব, গুগলে কী সার্চ করে? তার বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কী ধরনের কথা বলে? এ মোবাইল তার হৃদয়-আত্মাকে গুনাহের মাধ্যমে খোকলা করে দেবে। তাকে কুদৃষ্টি, খারাপ অভ্যাস, আর ন্যাক্কারজনক গুনাহে অভ্যস্থ করে তুলবে, অথচ আপনি বুঝতেই পারবেন না। এজন্য আমি তালিবে ইলমের অভিভাবক ও বাবা-মার কাছে করজোড়ে নিবেদন করছি, আপনার সন্তানের শখ পূরণ করতে গিয়ে তার জীবনকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অন্ধকারে ঠেলে দেবেন না। আপনি মনে করবেন না আপনি তাকে মাদরাসায় দিয়েই আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে। সে বড় আলেম হয়ে বের হবে। মানুষের মত মানুষ হয়ে যাবে। 

এজন্য আল্লাহর দিকে তাকিয়ে, আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে তার হাতে মোবাইল তোলে দেবেন না। কোনো আত্মীয়ও যদি মোবাইল তাকে গিফট করে, আপনি তার থেকে নিয়ে নেবেন। সন্তানকেও বুঝাবেন সে যেন স্মার্ট ফোন না কিনে। প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য সাধারণ ফোন কিনে দিতে পারেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: