চাঁপাইনবাবগঞ্জ | সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ info@mohanonda24.com +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩
ঈদুল ফিতরের মাস (শাওয়াল) এবং ঈদুল আজহার মাসের (জিলহজ) মধ্যবর্তী মাস জিলকদ।

চলতি আরবি মাসের ফজিলত

আ/স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশিত: ২২ মে ২০২৩ ১৩:৫১

আ/স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ২২ মে ২০২৩ ১৩:৫১

ফাইল ছবি

হিজরি ক্যালেন্ডারের এগারোতম মাস জিলকদ। ঈদুল ফিতরের মাস (শাওয়াল) এবং ঈদুল আজহার মাসের (জিলহজ) মধ্যবর্তী মাস জিলকদ। ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদ হজেরও তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) একটি এই মাস। তাই ইসলামে এ মাসের আলাদা ফজিলত ও রয়েছে। জিলকদ মাসের প্রকৃত আরবি নাম ‘জুলকাআদাহ’। ফার্সিতে ‘জিলকাআদাহ’; উর্দুতে ‘জিলকাআদ’ আর বাংলায় ‘জিলকদ’ প্রচলিত। জুলকাআদাহ বা জিলকদ অর্থ বসা, স্থিত হওয়া ও বিশ্রাম।

জিলকদ মাসের আগে (রজব, শাবান, রমজান ও শাওয়াল) রয়েছে ধারাবাহিক ইবাদতের ব্যস্ততম চারটি মাস। যেমন-রজব ও শাবান মাস দুটি রমজানপূর্ব ইবাদতের ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণের মাস। এর মধ্যে বিশেষ করে শাবানের পুরোটা সময় নির্ধারিত ফরজের বাইরেও নফল রোজার বিধান রয়েছে বান্দার জন্য। যেহেতু নবী (সা.) শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এর পরের মাস রমজান তো বান্দার দৈহিক ইবাদত ও আত্মশুদ্ধি লাভের শিখরে আরোহণ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহিমান্বিত একটি মাস।

এ মাসে আল্লাহপ্রেমী বান্দারা দিনরাতের সিংহভাগ সময় ইবাদতে মগ্ন থাকেন। সারা দিন রোজা রেখে শারীরিক সীমাবদ্ধতার কথা ভুলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা রাতের নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। পবিত্র রমজানের শেষে ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে মুসলমানরা অন্য আরেকটি মাসে (শাওয়াল) প্রবেশ করে। শাওয়াল মাসেরও বিশেষ আমল সম্পর্কে হাদিস শরিফে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। শাওয়াল মাসে মুসলমানরা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ছয় রোজার আমল পালন করেন।

অনুরূপভাবে জিলকদ মাসের পর রয়েছে অতিগুরুত্বপূর্ণ জিলহজ মাস। এটি হজ ও কুরবানির মাস। হাজি সাহেবদের এ মাসে হজকেন্দ্রিক ব্যস্ততায় কাটে, সঙ্গে থাকে কুরবানি। আবার যারা হজ করেন না, তাদেরও রয়েছে কুরবানির আমল। পাশাপাশি এ মাসের শুরুর ১০ দিনের ফজিলত ও গুরুত্ব অসামান্য।

হাদিস শরিফে জিলহজ মাসের এই ১০টি দিনের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে এভাবে-রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এমন কোনো দিন নেই, যে দিনের নেক আমল আল্লাহর কাছে জিলহজ মাসের এই ১০ দিনের নেক আমলের চেয়ে বেশি প্রিয়’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৫৭)।

এভাবে জিলকদ মাসের আগে-পরের মাসগুলোতে যেমন বিভিন্ন ফরজ-ওয়াজিব গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল রয়েছে, জিলকদ মাসে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্য কোনো বিশেষ আমলের কথা কুরআন-হাদিসে আসেনি। ফলে বান্দা এ মাসে কিছুটা বিশ্রামের অবকাশ পেয়ে থাকে পরবর্তী মাসগুলোর গুরুত্বপূর্ণ আমলের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের। তাই এ মাসকে জিলকদ বা বিশ্রামের মাস বলা হয়।

ঈদুল ফিতর বিগত এবং ঈদুল আজহা সমাগত-মাঝের এই জিলকদ মাসে নির্দিষ্ট কোনো ফরজ (দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ব্যতীত), ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও নফল ইবাদত না থাকায় এ মাস জিলকদ বা বিশ্রামের মাস বলে শরিয়তে পরিচিত। এই সময় আরবের লোকজন বাণিজ্য থেকে ফিরে আসত, যুদ্ধবিরতিতে চলে যেত। সে কারণেও এই মাস বিশ্রামের।

ঋতুর পরিবর্তনে এই সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকত না। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত এবং অন্যায়-অপরাধ (মদ্যপান) থেকেও নিবৃত্ত থাকতে সচেষ্ট থাকত। এসব কারণেও এই মাস বিশ্রামের বলে পরিগণিত হয়।

ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন কারণে এ মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় নবী (সা.) জীবনে যে কয়টি ওমরাহ করেছেন তার সব কটি করেছে এ জিলকদ মাসে। এ মাসেই সংঘটিত হয়েছিল হুদায়বিয়ার সন্ধি ও বাইয়াতে রিদওয়ান।

নবম হিজরিতে জীবনে একবারের জন্য মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ হয়েছিল এ জিলকদ মাসেই। এ মাসে নবীপুত্র হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্ম হয়েছে। পৃথিবীতে প্রথম কাবা শরিফের ভিত্তি স্থাপিত হয় এ মাসে বলে জানা যায়। সপ্তম হিজরির জিলকদ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম মদিনা থেকে মক্কায় সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে ওমরা পালন করেন। এ রকম আরও কিছু বিশেষ ঘটনা এ মাসকে তাৎপর্যমণ্ডিত করেছে।

জিলকদ মাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশেষ কোনো আমল না থাকলেও অন্যান্য আমল রয়েছে এবং এ আমল বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই করা মুমিনের কর্তব্য। অন্যান্য চান্দ্রমাসের মতো এ মাসেরও ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখের রোজা (আইয়ামে বিজ) রাখা যায় এবং তা অত্যন্ত ফজিলতের। এ ছাড়া সাপ্তাহিক সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজাও নববী সুন্নত। পাশাপাশি অন্যান্য মাসের সাধারণ নফল নামাজগুলো, তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি পাঠ করা যায়।

বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা এবং বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। দান-খয়রাত বেশি বেশি করা। জিলহজ মাসের ৯টি সুন্নত রোজা ও মহরম মাসের ১০টি রোজার প্রস্তুতি হিসেবে এই মাসে কিছু হলেও নফল রোজা করা। আর যাদের সামর্থ্য ও সুযোগ রয়েছে অর্থাৎ যাদের ওপর হজ ফরজ তাদের হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং কুরবানির প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আল্লাহ সবাইকে আমল করার তওফিক দান করুন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: