চাঁপাইনবাবগঞ্জ | বৃহঃস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ info@mohanonda24.com +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩
ছাত্র রাজনীতিকে আগের মত মানুষ সম্মানের চোখে দেখেনা - রাষ্ট্রপতি

ছাত্র রাজনীতিকে আগের মত মানুষ সম্মানের চোখে দেখেনা - রাষ্ট্রপতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২৩ ০৭:০৫

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২৩ ০৭:০৫

রাষ্ট্রপতি

দখলবাজি আর চাঁদাবাজির কারণে ছাত্ররাজনীতিকে এখন আর মানুষ আগের মতো সম্মানের চোখে না দেখে নেতিবাচকভাবে দেখে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

আজ শনিবার বিকেলে (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর অদূরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ‘ষষ্ঠ সমাবর্তন-২০২৩’ অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তিনি। জাবির ষষ্ঠ সমাবর্তনে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ইদানিং পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজির নেতিবাচক খবর... নিজেদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে রাখবেন’।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করার আহ্বায়ন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আদ্বুল হামিদ বলেন, ‘পড়াশোনার জায়গাটা ঠিক রেখে তারপরে রাজনীতি, সমাজসেবা, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে নিজেদের যুক্ত করতে পারেন। কোনোভাবেই লেখাপড়ার ক্ষেত্রে আপস করা যাবে না।’

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে প্রথম ১০০০ এর মধ্যেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীগণ মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন। তাঁরা রাজনীতির অনুশীলন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রত্যাশিত’।

রাষ্ট্রপতি বলেন, শুধু সনদসর্বস্ব শিক্ষা দিয়ে দেশ ও দশের উন্নয়ন সম্ভব না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব জীবনের যোগসূত্র স্থাপন করতে পারলে তবেই সেই শিক্ষা সফল হয়েছে বলা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য ও শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর শিক্ষার্থীদের মূল কাজ লেখাপড়া ও জ্ঞান অর্জন।’

কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণ নয়, রাষ্ট্রপতি হামিদ শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষ সাধনেও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তরুণ সমাজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে... এর জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নিরন্তর গবেষণা’।

গ্র্যাজুয়েট ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।

আদ্বুল হামিদ বলেন, দেশের উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনে মেধাবী তরুণদের যথাযথ পরিচর্যার জন্য আমাদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হবে।

গ্র্যাজুয়েটবৃন্দকে দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একক নয়, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় উন্নয়নের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি আদ্বুল  হামিদ বলেন, ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাও ব্যবসা শুরু করেই নীতি-নৈতিকতাকে বাদ দিয়ে কিভাবে শুধু নিজে বড়লোক হতে পারবে সেই চিন্তাভাবনায় ব্যস্ত থাকেন।

তিনি বলেন, ‘বড় বড় ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপী হন’।

চাকরিজীবীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, চাকরিতে ঢুকেই কিভাবে গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া যায় সেই চিন্তায় বিভোর থাকেন। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য অনেক সময় দেশ ও জাতির বড় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতেও পিছপা হন না।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে আদ্বুল হামিদ বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে অন্যতম বড় অন্তরায়। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।’

দেশকে জাতির পিতা স্বপ্নের সুখী ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়তে এবং একটি উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য রাষ্ট্রের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে স্নাতকরা তাদের মেধাশক্তি ও মানবিকতা দিয়ে কাজ করবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ব্যক্তিস্বার্থ মানষকে অমানুষে পরিণত হতে প্ররোচিত  করে

সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থ মানুষকে অমানুষে পরিণত হতে প্ররোচিত করে। এ ছাড়া অর্থলোভী হতে, দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং মানবিকতাবোধকে ধ্বংস করতে প্ররোচিত করে। তাই ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে মানুষের প্রতি কর্তব্য এবং সেবার বিষয়টি সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। দুর্নীতিবাজরা অবৈধভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করে। এ ছাড়া তারা রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিচারনীতি ও মৌলিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে এক অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। তারা গণতন্ত্রবিরোধী, তারা রাষ্ট্রবিরোধী, জনগণবিরোধী, জাতিবিরোধী, মানবতাবিরোধী আর ঘৃণিত।’

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কোনো কারণেই নিজেদের দুর্নীতিবাজদের দলে অন্তর্ভুক্ত করবেন না। আপনারা অর্পিত দায়িত্বের প্রতি সর্বোচ্চ সততা, ভালোবাসা, একাগ্রতা ও বিশ্বাস রেখে মানুষকে নিরলস সেবা দিয়ে যাবেন। দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করবেন, ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলবেন। দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করবেন। আপনারা নৈতিকতার মানদণ্ডে অত্যন্ত শক্ত হবেন এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত ডিগ্রি পেশাগত জীবনে আপনাদের এগিয়ে দেবে। তবে আদর্শবান মানুষ হিসেবে সমাজের অগ্রগতির হাল ধরার জন্য সুগভীর জীবনবোধ আর অনুভূতিশীল মননের বিকল্প নেই।’

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কনিজের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। সমাবর্তনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক। এ সময় অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে উৎসব -
এর আগে বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের নেতৃত্বে সমাবর্তনের শোভাযাত্রা শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এসে শেষ হয়। পরে বেলা ৩টায় রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদের নেতৃত্বে আরেকটি শোভাযাত্রা সমাবর্তনস্থলে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও প্রভাষক এবং সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়।

এবারের সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী মোট ১৫ হাজার ২১৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে ১৬ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক দেন রাষ্ট্রপতি।
তাদের মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৪ জন, উইকেন্ড প্রোগ্রামের ৩,৪৬১ জন, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ জন এবং পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮০ জন।
সমাবর্তনে অন্যান্যদের মধ্যে সংসদ সদস্যবৃন্দ, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম, প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার, রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ এবং সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডীনগণ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবর্তন উপলক্ষে আনন্দে উৎসবে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার, অমর একুশ ও বটতলাসহ পুরো ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের হাস্যোজ্জ্বল পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। এ ছাড়া দিনব্যাপী কালো রঙের গাউন, টুপি ও কস্টিউম পরে হলের বিভিন্ন জায়গায় ছবি তোলা, সহপাঠীদের নিয়ে দল বেঁধে গল্প করা এবং ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরা। 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: