চাঁপাইনবাবগঞ্জ | সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ info@mohanonda24.com +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানসিক চিকিৎসা সেবার অবস্থা নাজুক

ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৫ ২১:১৮

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৫ ২১:১৮

সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ প্রাপ্তবয়স্কের একজন এবং প্রতি আট শিশুর একজন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই।

এর ফলে জেলায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার কারণে, সচেতনতার অভাব এবং বেসরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পারায় জেলার অনেক মানসিক রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। এদের অনেকেই নানা অন্যায় আচরণের শিকার হন, আবার কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অথচ এসবের অধিকাংশই চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

চিকিৎসকরা জানান, সম্পর্কের দ্বন্দ্ব, বিচ্ছেদ, বেকারত্ব, আর্থিক সংকট, চাকরি হারানো, জীবনে দুর্দশাজনক ঘটনা, প্রিয়জনের মৃত্যু বা দূরে চলে যাওয়া, দুর্ঘটনায় আহত হওয়া, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং প্রত্যাশিত কোনো কিছু না পাওয়ার কারণে মানুষের মানসিক রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দশম প্রধান কারণ হলো আত্মহত্যা। আত্মহত্যা যারা করেন তাদের অধিকাংশেরই মানসিক সমস্যা থাকে। বিশেষত ডিপ্রেশনের কারণে অনেকেই আত্মহত্যা করেন। চিকিৎসকরা বলছেন, সচেতন হলে অধিকাংশ আত্মহত্যা রোধ করা সম্ভব।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে মানসিক রোগ চিকিৎসার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ নেই। তাই যখন কেউ মানসিক রোগ নিয়ে আসেন, প্রথমে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে তাকে রাজশাহীতে রেফার্ড করা হয়।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করে, আর জেলা হাসপাতালে মাসে প্রায় ৪০ জন আত্মহত্যার রোগী আসে। তাই সিভিল সার্জন অফিসের উদ্যোগে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় উপজেলার মেডিকেল অফিসারদের তিন থেকে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে মানসিক চিকিৎসা বিষয়ে। পাশাপাশি কমিউনিটি স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, প্রেম বিচ্ছেদের কারণে বিষণ্নতায় আমার মানসিক সমস্যা হয়েছিল। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। সপ্তাহে এক দিন করে রাজশাহী যাওয়া সময় ও অর্থ দুটোর জন্য কষ্টকর ছিল। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন ভালো আছি। তাই আমার দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে দ্রুত মানসিক চিকিৎসা সেবা চালু করা হোক।

২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানসিক রোগ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তবে বর্হিবিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে রাজশাহী রেফার্ড করা হয়। মানসিক চিকিৎসা বিভাগ চালুর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। যদি কর্তৃপক্ষ পোস্ট ক্রিয়েট করে ও চিকিৎসক নিয়োগ দেয়, তাহলে এখানে মানসিক রোগের চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রোগ্রাম অফিসার ডা. আসরাফুজ্জামান শাহিন জানান, এখানে মানসিক চিকিৎসার অবস্থা খুবই নাজুক। প্রতি মাসে অনেকেই আত্মহত্যা করে মারা যাচ্ছে। ডব্লিউএইচও -র শর্ট ট্রেনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে উপজেলা মেডিকেল অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে মানসিক চিকিৎসা গ্রহণের আগ্রহ কম, কারণ তারা মনে করে চিকিৎসা নিতে গেলে সমাজে ‘পাগল’ ভাবা হবে। তাই অনেকেই চিকিৎসা নিতে চান না। এজন্য সামাজিক সচেতনার কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া জেলার হাসপাতালগুলোতে মানসিক রোগের ঔষধের পরিমাণ কম থাকায় চিকিৎসা ব্যয়বহুল হয়, ফলে অনেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন না।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: