05/02/2025 ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে মর্মান্তিক বিদায়: শিশুকে ফেলে ফিরতে হলো মাকে
অনলাইন ডেস্ক
১ মে ২০২৫ ১৯:০৯
সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে হামলার ঘটনার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় পাসপোর্টধারী ফারহান ও শিশুপুত্র আজলান ভারতের মাটিতে থেকে যাওয়ার সুযোগ পেলেও, পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী সায়রাকে ফিরে যেতে হয় একা—ফেলে রেখে যেতে হয় তার বুকের ধনকে।
সীমান্তে শিশুটির জন্য বোতল নিয়ে খেলায় মন দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বাবা ফারহান। কিন্তু আজলান বোতল নয়, খুঁজছিল মায়ের স্নেহভরা স্পর্শ। মা সায়রা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সীমান্তরক্ষীরা কিছু সময়ের জন্য পরিবারটিকে আবার একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেন। কিন্তু শেষমেশ কান্না ও অসহায়তা নিয়েই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে।
সায়রা ও ফারহানের প্রেমের শুরু ফেসবুকে, যা পরবর্তীতে বিবাহে রূপ নেয়। সায়রা দিল্লিতে পাড়ি জমিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন। ফারহান বলেন, “আমার জীবন, আমার পৃথিবী, সব কিছুই বদলে গিয়েছিল।”
এই মর্মন্তুদ ঘটনা এখানেই শেষ নয়। একই দিনে সীমান্তে ফেরত পাঠানো হয় করাচির হালিমা বেগমকে, যিনি ২৫ বছর আগে ভারতের ওড়িশায় বিয়ে করে এসেছিলেন। স্বামী অনেক আগেই প্রয়াত, দুই ছেলের ভারতীয় পাসপোর্ট থাকায় তারা মায়ের সঙ্গে যেতে পারেনি। কান্নাভেজা চোখে হালিমা বলেন, “২৫ বছর পর যদি আমাকে এইভাবে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, তবে এই দেশ কি আমার নয়?”
মানবাধিকারকর্মী ও ‘মিডনাইটস বর্ডারস’ বইয়ের লেখক সুচিত্রা বিজয়ন বলেন, এই উপমহাদেশে এমন বেদনার গল্প অগণিত। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য সীমান্ত মানেই এক চিরন্তন অনিশ্চয়তা।
ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন ৭৫০ পাকিস্তানি ও ১ হাজার ভারতীয় নাগরিক। চিকিৎসা, বিবাহ বা আত্মীয়সঙ্গ—সবকিছু হারিয়ে তারা এখন কেবল পরিচয়হীন যাত্রী।
দুই দেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে জন্ম নিচ্ছে একের পর এক পারিবারিক ট্র্যাজেডি। আর সবচেয়ে বেশি ভুগছে সেই নিষ্পাপ শিশুরা, যাদের নেই কোনো নিজস্ব দেশ—শুধু আছে ভাঙা পরিবারের ভালোবাসা।